কলকাতায় আমাদের সেই ভরা বাড়ি

অনেকক্ষণ ধরে বসে থেকে মৃত্যু নিয়ে লিখব ভাবছি। বসে আছি কলকাতা বিমানবন্দরের ট্রাভেল ক্লাব লাউঞ্জে। গন্তব্য ঢাকা। দুই দিনের জন্য প্রায় ৬ বছর পর কলকাতায় এসেছি। শেষবার যখন এসেছিলাম, আমার বাবা বেঁচে ছিলেন। তার সাথে বিদায় নিয়ে ফিরে গিয়েছিলাম ঢাকা। সেটাই ছিল জীবিত বাবার সাথে আমার শেষ দেখা। জীবিত বললাম, কারণ মৃত বা চলে যাওয়া স্বজনদের নিয়ে আমার ভিন্ন ভাবনা। বাবার ২৩ টি ক্রোমজম আমার শরীরে। তাই অর্ধেকটা বাবা আমার সাথেই আছে।

বাবা-মায়ের যৌথ ক্রোমজমের একাত্মতায় এক একজন মানুষ আলাদা। স্বতন্ত্র স্বত্ত্বা। তাই নতুন যে মানুষটা বিচরণ করে, তার চলার পথের অভিজ্ঞতাকে সঞ্চয় করে নিউরনে-সিনাপ্সে সম্পূর্ণ নতুন ধরণের তথ্য জমা হয়। সেই তথ্যই আমাদের অভিজ্ঞতা।

মৃত বা চলে যাওয়া মানুষগুলোর কবর বা সমাধি আমাকে আকৃষ্ট করে না। বরং অনেক বেশী আকৃষ্ট করে তার বিচরণের ক্ষেত্রগুলো। তার সাথে অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করা অন্য মানুষগুলোকে আমি খুব যত্ন করে পড়বার চেষ্টা করি।

আজকে রাজারহাট নিউটাউনের আমাদের ভাড়া করা বাড়িটাতে গিয়েছি। ছয় বছরে এলাকাটা আর চেনা যায় না। মা সহ প্রতিদিন হেঁটে পাশের বাজারটাতে গিয়েছি। সেই বাজারে গিয়ে আমাদের সেই সময়ের গ্যাস এবং পানির পরিবেশকের সাথে বসে চা খেলাম। ঠিক একই ভাবে হেঁটে গিয়েছি সমস্ত পথ। পুরো সময়টা অজমো পকেটে ধরে রেখেছি। ছবি তুলেছি। এখন এয়াপোর্টে সেইসব ছবি প্রসেস করতে ইচ্ছে করছে না। ঢাকায় ফিরে ছবিগুলো পোস্ট দিব।

আবার ঢাকায় ফিরছি। কলকাতা থেকে। শেষবার বাবা ছিল, এখন নেই। বাবা ঢাকায় ফিরেছিলেন কার্গোতে। সেই রাতে ঢাকা এয়াপোর্টের নির্জন একটা কার্গো বেতে বাবার কফিনটা পরে ছিল। আকাশে চাঁদ ছিল। চাঁদের আলোয় একটা ভারী শরীর এবং ভারী পা কে সাথে নিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিলাম। ছবি আঁকতে পারলে বোঝাতে পারতাম।

**//** কলকাতা এয়ারপোর্ট, কলকাতা, পশ্চিম বঙ্গ, ভারত।

Related posts

Few Photographers Together

Got all my collected paintings and photographs in Mounts

Harry Potter again

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Read More