সুপ্রভাত।
গত কয়েক দিন থেকে মনটা ভালো নেই। আসলে মন এতোই খারাপ যে কোন দাওয়াত বা পার্টিতে যেতে ইচ্ছে করে নাই। আবার জীবিকার তাগিতে কাজকর্মও বন্ধ করি নাই। জীবন চলছে, চলবে। আসলে একটা ঘটনা আমাকে অবরুদ্ধ করে ফেলেছে – আমারই দেশে একটা ১ বছর ১০ মাস বয়সী বাচ্চা ধর্ষন হয়েছে। আমি দুর্বল চিত্তের মানুষ। এই ঘটনায় কিছুই করতে পারি নাই, তাই নিজের যাবতীয় বিলাসিতা থেকে গুটিয়ে নিয়েছি। জগতসংসারের কোন আনন্দময় বিষয় আর ভালো লাগছিল না, লাগার কথাও না। সব কিছু ভুলে যাওয়ার মতো করে এটাও ভুলে যাব কোন একদিন। আসলে ঘনঘন ভুলতে থাকার অভ্যাসের কারণে আমার বা আমাদের মস্তিষ্কের আদল মনে হয় পরিবর্তন হয়ে গেছে। এখন আমরা দ্রুত ভুলতে পারি। খারাপ না। এগিয়ে যাওয়া বা উন্নয়নের দিকে অগ্রসর হওয়ার জন্য এটা একটা অতি আবশ্যিক যোগ্যতা।
এই দেশে, এই নগরে তবুও মনে হয় খারাপ নেই।
তবে কিছু বিষয় বড্ড গোলমেলে লাগে যখন অযোগ্যতা বা অক্ষমতা সম্পদে পরিণত হয়। রাস্তায় বের হলেই ভিখারি, তার সম্পদ হলো একটা হাত নেই। এই নেই অঙ্গকে সম্পদ বিবেচনা করে তার রোজগার চলে। আর জাতি হিসেবে আমরা বেশ ভালো মানেরই সুইট। আহারে, উহুরে, কী হবে রে… করেই যাবতীয় অক্ষম মানুষের পাশে দাড়াই। এই অভ্যাস জাতিগত বৈশিষ্ট হয়ে গেছে। আগেই বলেছি, জাতি হিসেবে আমরা বেশ সুইট এবং যেকোন সিস্টেমের একটা সমান্তরিক সিস্টেম দাড়া করাতে আমরা ভালোই পারি।
ভিখারির যে উদাহরণ দিয়েছি, সেটা খারাপ উদাহরণ, স্বীকার করে নিতে কোন সমস্যা নেই। এতো দিনে বুঝে গেছি দারিদ্র্য কাউকে মহান করে না। ভিক্ষাবৃত্তি আরোও না। আসলে ভিক্ষুক থাকাটা পুরো রাষ্ট্রের জন্য অপমান যেখানে মধ্যম আয়ের দেশে পরিনত হওয়ার স্বপ্নে সাওয়ার। আমাদের জিডিপি বাড়ছে, জীবন ধারনের খরচও বাড়ছে আবার ভিক্ষুকও বাড়ছে । বড়ই সৌন্দর্য। আবার অন্যদিকে শিক্ষাব্যবস্থার যাচ্ছেতাই অবস্থা।
রাঙ্গালীর বসে (কুড়িগ্রাম) আমাদের বাড়িতে থাকে একটি পরিবার। তাদের ছেলে গতবছর পঞ্চম শ্রেণী পাশ করেছে। অথচ সে তার নামটাই ঠিকমতো লিখতে পারে না। এই ঘটনা এখনো হজম করতে পারি নাই। তারমানে কী নুন্যতম কমপ্লাইন্স থাকবে না! এই ছেলেই হয়তো একদিন মাধ্যমিক কিংবা উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে ফেলবে। এখন নাকি পাশ করতে অনেক সহজ। প্রশ্নপত্র আগেই হাতে চলে আসে। এরপর হয়তো এই ছেলেই সুবিধাবঞ্চিত কোটায় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বে।
আমি বলছি না বা বলার চেষ্টা করছি না যে যারা কোটা সুবিধায় পড়ছেন বা সুবিধা নিচ্ছেন তারা প্রতিভাবান নন। আমার আপত্তি হলো যেখান থেকে কোটা সুবিধা শুরু তার আগে।
আমাদের সংবিধান আমাদের সম অধিকার নিশ্চিত করে। সম্ভবত আর্টিকেল ২৭। মোটাদাগে যতদূর বুঝি আমার যা অধিকার, রাঙামাটিতে থাকা একজন আদিবাসি ছেলের একই অধিকার। আবার মহান মুক্তিযোদ্ধাদের বা তাদের পরিবারের একই অধিকার। যখন রাষ্ট্র বলে অমুক অঞ্চলের অধিবাসিরা সুবিধাবঞ্চিত, এটা রাষ্ট্রের অযোগ্যতা। সবার সমান সুবিধা নিশ্চিত করতে না পারার ব্যর্থতা।
রাষ্ট্র যদি উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষার মানটা ঠিক করে ফেলতে পারে, আমি পুরোপুরি নিশ্চিত আজকে কোটা নিয়ে ছাত্রদের আন্দোলন করতে হতো না। যদিও সমঅধিকারের রাষ্ট্রে কোটা ব্যবস্থাটাই হাস্যকর।
আমি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সৌভাগ্য আমার হয় নাই। কিন্তু চারুকলায় আড্ডা দিতে না পারার যন্ত্রনা হয়। কিংবা টি এস সি তে চা খেতে না পারলে মনে হয় কী যেন নেই। আসলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটা ছাত্র-ছাত্রীকে আমি হিংসা করি। কোটা সংষ্কার নিয়ে তাদের যে ভাবনা, আমি পূর্ণভাবে সমর্থন করি।