২০০৪ সাল। সেই সময় অনেক কিছু করার চেষ্টায়

২০০৪ সাল। সেই সময় অনেক কিছু করার চেষ্টায় ছিলাম। বিশেষ করে তথ্য-প্রযুক্তি নিয়ে। আমার বিশেষ বন্ধু লিপু ভাই আমাকে একদিন তার বড় ভাইয়ের অফিসে নিয়ে যেতে চাইলেন। ওনাদের ইন্টারনেট আর কম্পিউটার নেটওয়ার্কের কী জানি কী হয়েছে, এই মর্মে।

লিপু ভাই বরাবরেই তারছিড়া মানুষ। মানে হলো অনেক ক্ষ্যাপাটে। তাই কোন রকম আয়োজন না করে তার বড় ভাইয়ের অফিসে গেলাম। সময়টা ছিল লাঞ্চ এর পরপরই। গিয়ে আমি পুরো তাজ্জব। ঝকঝকে তকতকে একটা অফিস। ওয়াল-টু-ওয়াল কার্পেটিং করা। এতোই গোছানো যে জুতা পরে ঢুকতেও সঙ্কোচ হচ্ছিল। সবাই জুতা পরে আছে, তাই আমি একটু ভরসা পেলাম। অবশ্য তখনো জানতাম না বড় একটা ধাক্কা অপেক্ষা করছে।

সবে মাত্র যখন অফিসের রিসিপশন পেরিয়ে ভিতরে এসেছি, একটা রুমে টিভিতে খেলা হচ্ছে। সেই রুমের টেবিলের উপর জুতা সহ পা তুলে, চেয়ারে হেলান দিয়ে, স্যুট-টাই পরে এক ভদ্রলোক সিগারেট খেতে খেতে খেলা দেখছেন। যেখানে পুরো অফিসটাই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। বোঝাই যাচ্ছে জগৎ সংসারের প্রচলিত ভদ্রতা এই ভদ্রলোকের খুব পছন্দের বিষয় নয়। আর আমাকে অবাক করে দিয়ে বেরসিক লিপু ভাই সেই রুমেই ঢুকলেন আর আমাকে ডাকলেন। আমাকে ঢুকতে দেখে নিপাট সেই ভদ্রলোক খুব বিরক্ত হয়ে পদযুগল টেবিল থেকে নামালেন। এবং এক ঝলক ভালো করে স্ক্যান করে নিলেন আমাকে। লিপু বলল ইনিই তার ভাই। ইমতিয়াজ মাহমুদ (Imtiaz Mahmood)। মানে আমাদের ইমন ভাই।

ইমন ভাইয়ের সাথে সেদিনের পরিচয়ের গল্পটা আমি এখনো করি। ক্রিকেট খেলা থাকলে এই লোক কোর্টে যেতে পছন্দ করেন না। বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয়া আর বই পড়া তার পছন্দের জায়গা। ওকালতি টা মনোযোগ দিয়ে ঠিক করেন নাই। যদিও ইদানিং দাবী করছিলেন যে উনি অনেক সিরিয়াস এই বার। অনেক কাজ করবেন। অবশ্য বিগত বছরগুলোয় তার এই বক্তব্য শুনে আমি অভ্যস্ত। তাই পাত্তা দেই না।

ওকালতি বাদে ইমন ভাই আর সব কাজ বেশ গুছিয়ে করেন। যেমন আয়োজন করে ছবি তুলেন। আয়োজন করে বই পড়েন। এবং আয়োজন করে মানুষের উপকার করেন। অবশ্য মানুষের উপকার করা মনে হয় ওনাদের পারিবারিক ধর্ম। একটু ব্যাখ্যা করি।

কোন একটা কারণে ২০০২ সাল থেকে নিজের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পরি। সেইসময় অনেক কষ্ট হয়েছিল। প্রতিমাসে এক রকম নিয়ম করে আমাকে হাত খরচ দিতেন লিপু ভাই। আর বিগত বছরগুলোতে মোট কতবার ইমন ভাই এর থেকে টাকা ধার করেছি সেই সংখ্যা মনে হয় বলতেও পারব না।

আমি শুধু ছবি তোলার নেশাটা ওনার মাথাতে ঢুকাতে পেরেছি। যাকে বলে একদম হাতে কলমে শুরু করিয়ে দেয়া। এরপর উনি এগিয়ে গেছেন। এখন ওনার ছবি গুলো হয়। মানে আমার ভালো লাগে। আর আমার যাবতীয় বিষয়ের পরামর্শদাতা ইমন ভাই। আমার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের আইনি সমস্যা থেকে শুরু করে কোন বইটা পড় উচিত যাবতীয় পরামর্শ ইমন ভাইয়ের। এমনকি আমার পারিবারিক এবং ব্যক্তিগত বিষয়ের সকল সমস্যার বন্ধু ইমতিয়াজ মাহমুদ। ইমতিয়াজ মাহমুদ আমার বেস্ট ফ্রেন্ডের নাম। গত ২১ জুন প্রায় পুরো রাত আমার বাসায় আড্ডা দিয়েছি। আমার জন্মদিন উপলক্ষে নির্মল আড্ডা। আমি আসলে নিজের কোন আনন্দের দিন ওনাকে ছাড়া চিন্তাও করতে পারি না।

সমস্যা হলো ইমন ভাইয়ের সবকিছুই আমার পছন্দ। মানে সবকিছুই। কয়েকদিন আগে নিজেকে কাল্পনিক দেশের প্রধান চিন্তা করেছিলাম। যদি তেমন হতো আমি কী করতাম টাইপ চিন্তা। আমি প্রথমেই ঠিক করেছিলাম চোখ বন্ধ করে ইমন ভাইকে আগে ধরতে হবে। ইমন ভাই আমার সেই বিশ্বাসের জায়গা। ভরসার জায়গা।

আমি ইমতিয়াজ মাহমুদকে নিয়ে আস্ত একটা রচনা লিখতে পারব। এই মানুষটাকে এখন পর্যন্ত কখনো কোন দুষ্ট চিন্তা করতে দেখি নাই। অথচ ওনার দর্শন, ওনার লেখালেখি থেকে আমি অনেক বেশি উদ্বুদ্ধ। সমাজ, রাষ্ট্র, সম্পর্ক সবকিছুতে ওনার মতামত বা লেখালেখি আমি অনেক আগ্রহ করে গ্রহণ করি। মানুষে-মানুষে সম্পৃতি ওনার একটা দার্শনিক জায়গা। কী আশ্চর্য! ওনার নামে মামলা হয়েছে। ৫৭ ধারায়। যদিও এই ৫৭ ধারার ফজিলত নিতে আমাকে ওনাকেই ফোন করতে হবে। আচ্ছা ইমতিয়াজ মাহমুদের যাবতীয় বিষয় আমি সমর্থন করি। আমার নামেও কী মামলা হবে?

(ছবিটা আমার তোলা। ২০০৯ সালের জুলাই মাসে)

Related posts

আজকে আবার বৃষ্টি এলো, এই শহরে

হ্যাপি নিউ ইয়ার ২০২২

Parsha Jenifa

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Read More