বাংলা নতুন বছর শুরু হয়ে গেল। যদিও এই বাংলায় মানে বাংলাদেশে বাংলা তারিখ দিয়ে কিছু যায় আসে না। এখানে সবই ইংরেজি কাজ কারবার। এমনকি আমাদের ভাষাটাও এখন বাংলিশ। তারপরেও নববর্ষ। মানে পয়লা বৈশাখ। অনেক বড় ব্যাপার।
ছোট বেলায় মানে আমাদের গ্রামে বৈশাখ একটা তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় ছিল। একটু ব্যাখ্যা করি- আমার পারিবারিক নাম লুৎফর রহমান ব্যাপারী। আমার ১৯৯০ সালের প্রাথমিক বিদ্যালয় সমাপনী পরীক্ষার সনদে আমার নাম এটিই। তো আমি বংশ পরম্পরায় ব্যবসায়ী। জানামতে আমি বংশের পঞ্চম পুরুষ যে ব্যবসায়ী। পয়লা বৈশাখ আসলেই শুরু হতো হালখাতা। বেশিরভাগ হালখাতার জন্য দিত সস্তা দাওয়াত কার্ড। সেই কার্ডে লেখা থাকত কে কত টাকা পাওনা আছে।
আসলে আমার পূর্ব পুরুষেরা একটা কাজ মনোযোগ দিয়ে করতেন, সেটা হলো খাওয়া। তাই যাবতীয় মুদির দোকান, আরত সবখানে অনেক টাকা করে বাকী পরে যেত। বছরের একটা বিশেষ দিনে সেটা শোধ করে দিতেন। ছোটবেলায় আমার অনেক দায়িত্বের একটা কাজ ছিল দাদাজানের সাথে হালখাতার দাওয়াতে যাওয়া। আহামরি কোন খাবার না মানে আমা পছন্দের খাবার ছিল না সেগুলো। অনেক রকম মিষ্টি, লুচি, নিমকি। এখনকার মতোন মিস্টিতে ময়দা মিক্স করা তখনো কুড়িগ্রামের বোকা মানুষগুলো শিখে নি। তাই খাঁটি ছানার মিস্টি ছিল। আমি একটা দুইটা খেয়েই কাহিল। এখনকার মতোন এমন নাদুস-নুদুস-ভুরিয়াল তখন ছিলাম না। কিন্তু এক দিনে অনেক কয়টা যায়গায় যেতে হতো। আর অনেক বড় খরিদ্দার’ এই খেতাবের কারনে খাতিরটা হতো দেখার মতো।
আফসোসের বিষয় হচ্ছে জীবনের এই সময়ে এসে এখনো পয়লা বৈশাখ আসলেই অজান্তেই খালি হালখাতা ঘোরে। কিন্তু হায়! এই বঙ্গভূমে খাঁটি ছানার মিষ্টি এখন পাই কোথায়!
তারপরেও মিষ্টি থাক আর না থাক, ব্যবসা ভালো হোক আর না হোক, প্রেমের জোয়ারে ভাসি অথবা সাবমেরিন’ই হই তবুও নববর্ষ। গেল বসন্তের উত্তেজনাটুকু পুরোপুরি মাথায় রেখে সবাইকে পয়লা বৈশাখের শুভেচ্ছা। কেবল এই ঢাকা শহরে সূর্য উঠেছে- রক্ত লাল, রক্ত লাল, রক্ত লাল। আপনারা অবশ্যই অনেক আনন্দ করবেন, উৎসব করবেন। এইরকম একটা অসাম্প্রদায়িক উৎসবকে কোনওভাবেই হত্যা করতে দিবেন না। শুভ নববর্ষ।