সবচেয়ে প্রিয় শিল্পী, প্রিয় গান এবং প্রিয় গীতিকার

আমার তিন প্রিয় বিষয় এক সাথে এই গানে। শচীন কর্তা’র গান। গীতিকার মীরা দেব বর্মন। কতবার গানটা শুনেছি সেই হিসেব অনেক পড়ে বরং বলা উচিত দিনে কতবার শুনি! অনেক গান আছে যেগুলো কিছুদিন পড়ে আর ভালো লাগে না বা হঠাত হঠাত ভালো লাগে। এই গানটা অনেক ব্যতিক্রম। যতদিন যাচ্ছে নতুন নতুন ভাবে এই গানটার প্রতি ভালোবাসা তৈরী হচ্ছে। এই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ প্রেমের গান এটি। গানকে ভালোবেসে ঘর বাঁধলে এটি সম্ভব।

১৯৩২ সালের দিকে কর্তার গানের গুরু ছিলেন ভীষ্মদেব চট্টোপাধ্যায়। গুরুর থেকে বয়সে ২-৩ বছরের ছোটো ছিলেন তিনি। সেখানেই পরিচয় ভীষ্মদেবের আর এক কৃতী ছাত্রী মীরা দাশগুপ্তর সঙ্গে। ১৯৩৮ সালে বিয়ে করেন এই গুনী দম্পত্তি।

২৭ জুন ১৯৩৯ এ জন্ম হয় রাহুল দেব বর্মন এর। পরবর্তিতে স্বামী এবং ছেলের নেপথ্যে থেকে কখনো সামনে আসেন নি মীরা দেবী। অন্তরালেই থেকেছেন সব সময়। লিখে গেছেন কিছু বিখ্যাত গান। যে গানগুলন সবাই শুনেছেন। কিন্তু কখনো জানতে পারেন নি গীতিকার কে। মীরা দেবী’র বিখ্যাত কিছু গান হলো:

  • ঘাটে লাগাইয়া ডিঙ্গা পান খাইয়া যাও বাঁশী
  • তাকডুম তাকডুম বাজাই
  • নিটোল পায়ে রিনিক ঝিনিক
  • বর্ণে গন্ধে ছন্দে গীতিতে
  • রঙিলা রঙিলা রঙিলা রে রঙিলা
  • কে যাস রে ভাটি গাঙ বাইয়া

এখন মনে হয় অনেকেই চোখ কপালে তুলে বলছেন “আরে এই গান গুলন এনার লেখা?”। প্রথমবার আমার এমনই মনে হয়েছিল। অবস্য গানগুলোর যে অদ্ভুত দোলা তার জন্য শচীন কর্তা অনেক বেশি মনোযোগ আকর্ষণ করে। সব গুলো গানের সুরকার তিনি।

গানের সংসার। সত্যিকারের গানের বসবাস। যতবার বর্ণে গন্ধে শুনি ততবার চোখ ভিজে যায়। এত সুন্দর প্রেমের গান আর পৃথিবীতে তৈরী হবে না। হওয়ার উপায় নাই। যতবার এই গান শুনি ততবারই মনে হয় আমি প্রচন্ড ভাবে প্রেমে পড়ে আছি। কিন্তু কার প্রেমে পড়েছি বা পড়ে আছি এটা কখনো মাথায় আসে না। কিন্তু এই যে প্রেম প্রেম নেশা, এই যে আকুলতা বা এই যে উথাল পাথাল ভাবনা, এটা অনেক পবিত্র। এই পবিত্রতা নিয়ে থাকতে আমার ভালো লাগে। ইট কাঠের এই শহরে প্রত্যেকদিন প্রেমে পরছি এই গানটার জন্য। আহা! কি সৌভাগ্য আমার।

২০০৬ সালে একবার আমার মাথা খারাপ হয়ে গেলো। আগস্ট মাসে। এই গানটা মাথার মধ্যে ঢুকে গেলো। বের হয় না। অফিস এ, বাসায়, রাস্তায় এবং ঘুমের মধ্যেও এই গানটা শুনেছিলাম। মাথা খারাপের দশা ছিলো ৯ দিন। তারপরে অনেক কড়া ঘুমের অষুধ খেয়ে ঘুমিয়েছিলাম পুরো একদিন। তবেই রক্ষা। সেই ঘটনার পড়ে কিছুদিন গানটা শুনতে ভয় পেয়েছিলাম। পাছে আবারও আটকা পড়ে যাই!

একটা গান কত সহজে আমাকে রোমান্টিক করে দিতে পারে। একটা গান কত সহজে মনে করে দিতে পারে যে আমি প্রেমের মধ্যেই থাকি। একটা গান কতটা সহজে প্রমান করে দেয় যে আমার এখনো মৃত্যু হয় নাই। একটা গানের এত বড় শক্তি? একটা গান এত বড় স্বপ্ন দেখাতে পারে! প্রত্যেকদিন মনে করিয়ে দেয় যে পৃথিবীটা অনেক রোমান্টিক, পৃথিবীটা অনেক সুন্দর!

একজন মানুষ কতটুকু রোমান্টিক হলে এমন করে ভাবতে পারেন? লিখতে পারেন? কি সুন্দর ভালোবাসার উপস্থাপন! কি সুন্দর কথামালা! চোখে জল কি আর এমনি আসে?

আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি গান হচ্ছে মানুষের সৃষ্ট সবচেয়ে বড় শিল্পকর্ম। আর এই গানটি পৃথিবীর সেরা সৃষ্টি। আমি অনেক ভাগ্যবান যে এই সেরা কাজটি আমার ফোনে এ, কম্পিউটার এ, আইপড এ এবং আমার মিউজিক সিস্টেম এ। ধন্যবাদ টেকনোলজি।

বর্ণে গন্ধে ছন্দে গীতিতে
হৃদয়ে দিয়েছ দোলা
রঙেতে রাঙিয়া রাঙাইলে মোরে
একি তব হরি খেলা
তুমি যে ফাগুন রঙেরও আগুন
তুমি যে রসেরও ধারা
তোমার মাধুরী তোমার মদিরা
করে মোরে দিশাহারা

মুক্তা যেমন শুক্তিরও বুকে
তেমনি আমাতে তুমি
আমার পরানে প্রেমের বিন্দু
তুমিই শুধু তুমি

প্রেমের অনলে জ্বালি যে প্রদীপ
সে দীপেরও শিখা তুমি
জোনাকি পাখায় ঝিকিমিকি নেচে
এ হৃদি নাচালে তুমি
আপনও হারায়ে উদাসি প্রানের
লহ গো প্রেমাঞ্জলি
তোমারে রচিয়া ভরেছি আমার
বাউল গানের ঝুলি

চমকি দেখিনু আমার প্রেমের
জোয়ারও তোমারই মাঝে
হৃদয় দোলায় দোলাও আমারে
তোমারো হিয়ারই মাঝে
তোমারও প্রানের পুলক প্রবাহ
নিশীতে চাহে আমাতে
জপ মোর নাম গাহ মোর গান
আমারি একতারাতে

Related posts

বাসার পাশেই দু’টি গ্যালারি

প্যাঁচা এবং মঙ্গল শোভাযাত্রা

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Read More