প্যাঁচা এবং মঙ্গল শোভাযাত্রা

মঙ্গল শোভাযাত্রা

মঙ্গল শোভাযাত্রা হিন্দুয়ানি বিষয় – ইদানিং এই কথাটায় অনেক জনকে দেখতে পাচ্ছি হুট করে বাঙালী সহিহ্ মুসলিম হবার তাগিদ পাচ্ছেন বেশ। কিছুদিন আগে আমার পরিচিত এক সঙ্গীত-প্রেমী রসিক ভদ্রলোক দাবী করলেন পহেলা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রা থেকে প্যাঁচার মুখোশগুলো সরিয়ে ফেলতে। কারণ প্যাঁচা হিন্দু দেবী লক্ষ্মীর বাহন আর ‘মঙ্গল বারতা’ সেই দেবীর সাথেই সম্পৃক্ত। শুধু তাই নয়, আগে যেহেতু মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম ছিল আনন্দ শোভাযাত্রা, তাই জোড় করে হিন্দুয়ানি বানানো হচ্ছে এই আয়োজন। খুবই সুন্দর যুক্তি। সবই ঠিক ছিল শুধু প্যাঁচার অংশটা ছাড়া।

আমি অনুমান করে বলতে পারি – না আমি যুক্তি দিয়েই বলতে পারি প্যাঁচার আবির্ভাব হিন্দু ধর্মের অনেক আগেই ছিল এই পৃথিবীতে। মানুষ যেমন প্রথমে মানুষ ছিল পরে বিভিন্ন ধর্মের তেমনি প্যাঁচা প্রথম থেকেই প্যাঁচাই ছিল। প্যাঁচাদের কোন ধর্ম সম্পর্কে আমার জানা নেই। একটা প্রজাতিকে বর্তমান রূপে বিবর্তিত হয়ে আসতে অনেক সময় লাগে। এটা দলবদলের মতো কোন বিষয় না যে হুট করে একদিন মুজিব কোর্ট পরা শুরু করে দিলেন আর কিছুদিন পর নিজেকে আওয়ামী লীগ বলে প্রতিষ্ঠা করলেন। বিবর্তন বা ন্যাচারাল সিলেকশন অনেক ইন্টেরেস্টিং একটা বিষয়। এখানে রাতারাতি বা কয়েক বছরের কোন হিসেব নেই। এখানে হাজার হাজার বছরের হিসেব। আজকের যে প্যাঁচা তাকে অনেক হাজার বছর ধরে টিকে থেকে এ পর্যন্ত আসতে হয়েছে। প্রকৃতির সংগে মানিয়ে নিয়ে নিজেকে পরিবর্তন করে বেঁচে থাকতে হয়েছে।

নদী অববাবিহকায় যেসব আদিম কৃষিভিত্তিক জনপদের কথা আমরা জানতে পারি, সবগুলোর মধ্যে একটা অদ্ভুত মিল ছিল, তা হলো প্রকৃতির সাথে মানিয়ে নিয়ে প্রাকৃতিক উপায়ে কৃষিকাজ করা। বন্যায় বয়ে আনা পলিমাটি কিংবা বৃষ্টি তার উপাদান।

মানুষ কিংবা প্যাঁচা যেমন অনেক কাল থেকে টিকে আছে তেমনি টিকে আছে ইঁদুর। অনুমান করতে পারি আদিম কৃষিভিত্তিক সমাজে ইঁদুর অবশ্যই ছিল আতঙ্কের নাম। ক্ষেতের ফসলের ভাগ নিত ইঁদুর (এখনো নেয়)। আমার আলোচনা অন্য প্রাণীটি মানে প্যাঁচা রাতের বেলা জেগে জেগে ইঁদুরদের সাবার করে। ইঁদুর তার খাদ্য।

যে প্রাণী ইঁদুর শেষ করে তাকে কীসের চোখে দেখবেন! আমি নিশ্চিত প্যাঁচাকে লক্ষ্মীর বাহন বানানো হয়েছে এই কারণেই। ধার্মিক হিন্দু ভাইদের নিশ্চই আরো কোন ব্যাখ্যা আছে। আমি আমার ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট।

যে পাখি কৃষকদের উপকার করে তা কোন যুক্তিতেই শুধু হিন্দুদের হতে পারে না। আর আমার জানামতে পাখিদের কোনও ধর্ম নেই। যদি প্যাঁচা সমাজ কখনও নিজেদের হিন্দু বা অন্য কোন ধর্মের দাবী করে – সেদিন বাঙালি মুসলিম ভাইদের বলব পহেলা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রায় আর সামিল না হতে। তার আগে প্যাঁচাদের ধন্যবাদ দিয়ে হাজারো বছরের যাবতীয় উপকারের কথা স্বীকার করে মঙ্গল শোভাযাত্রায় সামিল হোন।

Related posts

বাসার পাশেই দু’টি গ্যালারি

হ্যাপি নিউ ইয়ার ২০২২

I love homemade snacks