নি-ছক

Photo by Erkan Utu on Pexels.com

একুশটা বছর! কেমন করে যে চলে গেলো বুঝতে পারলাম না. সময় চলে যায়; গভীর রেখাগুলন থেকে যায়। তবুও একুশটা বছর! একুশ বছর পরে মেয়ের সাথে আমার দেখা হবে! কত বড় হয়েছে সে? দেখতে কেমন হয়েছে? কেমন করে সে হাসে? কার মতন দেখতে হয়েছে? চুলের রং কি? এ ধরনের অনেক প্রশ্ন মনে আসছে। অপেক্ষা করছি। অপেক্ষা! অপেক্ষার উত্তেজনা।

আমার মেয়ে কি দরজার ওপাশে আমার জন্য অপেক্ষা করছে? ওর মা কি আমাকে দেখেতে এসেছে? আর কে কে এসেছে?

আমি শুয়ে আছি বা ঘুমিয়ে আছি একটা হাসপাতালে। আসলে মেয়ের জন্য অপেক্ষা করছি। মেয়ের সাথে দেখা করবো বলেই ঢাকা থেকে ছুটে আসা। এসেই এই বাজে এক্সিডেন্ট। খুব ভালো লাগছে না। মাঝে মাঝে মনে হয় ঘুমিয়ে যাই আবার মাঝা মাঝে জাগি। অন্ধকার সব। কিছুই দেখি না। শরীরটাও অনুভব করতে পারি না।

একুশ বছর আগে ছোট্ট এত্তটুকু ছিলো সে। মাত্র ৭মাস। এরপরে আর দেখা হয় নাই। যে নিখুত সুরে জীবনটা বাঁধা ছিলো; সুরটা হুট করে কেটে গেছে। আর কখনই তাল ফিরে আসেনি। মাঝখানে ২১টা বছর কেটে গেলো।

এই ২১বছরের প্রত্যেকটা দিন মেয়ের কাছে চিঠি লিখেছি। পোস্ট করা হয় নাই। কত রাতের পর রাত পুরনো চিঠিগুলন পড়েছি আর কেদেছি। আহারে! নিজের উপর নিজেরই যত মায়া! আমার মেয়ের হাতে সব চিঠিগুলন তুলে দিবো। আমার মেয়ে কি বাংলা পড়তে পারে?

কাজের জন্য পুরো পৃথিবী ঘুরে বেরিয়েছি। যত সব ভালো ভালো স্থানে পলক ফেলেছি, মেয়েকে মিস করেছি। আসলে অবাস্তবের পাওয়া বাস্তবের থেকেও স্পষ্ট যদি ভালোবাসা থাকে!

চিন্তা গুলন এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে! আবার মনে হয় ঘুমিয়ে যাবো। মেয়েটার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছে।

যখন আমি এইসব চিন্তা করছি তখন আমি সিসিউতে। বাইরে আমার বন, বনের স্বামী ইবন তাদের ছেলে। ডাক্তার এসে জানালো এখন লাইফ সাপোর্ট খুলে দিবে কিনা! অনেক কান্নার আওয়াজ। আমার বন সাইন করে দিলো।

Related posts

বাসার পাশেই দু’টি গ্যালারি

মানুষ ছাড়া অন্য প্রাণী মারবে কেমন করে?

সামাজিক বিড়ম্বনা