এই ছবিটার নাম মৃত বনাম জীবিত। তুলেছিলাম কয়েক মাস আগে জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে। আজকে ছবিটা আমার ফ্লিকারে পোস্ট করলাম। যেহেতু আমি এখন উপলক্ষ করছি ছবিটাকে তাই ছবির সাথে একাত্মতা করতেই হচ্ছে। এটা দায়বদ্ধতা এক ধরনের। ছবির প্রতি দায়ভার।
আমার বাড়ি কুড়িগ্রামের রায়গঞ্জে। বাড়ি যেতে পাড়ি দিতে হয় ধরলা নদী। আগে এই নদীর উপর ব্রিজ ছিল না। তখন অনেকটা পথ হেটে যেত হতো চরের মধ্য দিয়ে। অনেক কষ্টের একটা পথ। নদীর চরে সব সময় দু’জন ভিখারিনীকে বসে থাকে দেখতাম। কথনও কথা বলতো না। ফ্যাল ফ্যার করে চেয়ে থাকতো। ভাবলেশহীন (আমি তাদের সম্পর্কে আমার একটা কবিতা লিখব তে বলেছি) মুখ। আমি আজকে চিন্তা করছি তারা কী মৃতজন ছিলেন? তাদের জীবন বোধটা কী ছিল? জীবনের কোন দিকটা নিয়ে তারা ভাবিত হতেন?
অনেক নির্জনতায় আমার বাস এখন। একা একা থাকি। ভাবি। অনুভব করার চেষ্টা করি জীবনকে। এই নির্জনতায় মাঝে মাঝে নিজেকে মৃত মনে হয়। বা মৃতপ্রায়। এই অনুভবের প্রেক্ষিতে মাথায় এলো একটা সার্ভিসের কথা। এমন কোন একটা নাম্বার থাকবে। যে নাম্বারে ফোন করলে অটো এন্সার হবে। এবং যা থেকে শোনা যাবে লাইভ কোলাহল। যে সময়টা আমি অনেক নিঃসঙ্গ অনুভব করব। আমি সেই নাম্বারে ফোন করে কোলাহল শুনব। কোলাহলকে এখন জীবন মনে হয়। মানে আমার এই জীবনবোধের সাথে তুলনা করে।
এমন কোন নাম্বার কী আছে যেখানে ফোন করে মানুষের দুঃখগুলোন অটো ক্লিন করে ফেলা যাবে। ফোন করলেই অপারেটর বলবে "আপনার দুঃখ ডাউনলোড করা হচ্ছে। ক্লিন করতে সময় লাগবে ১০মিনিট। এই ১০ মিনিট আপনি চোখ বন্ধ করে দিগন্ত বিস্তৃত কাশফুলের মাঝে ছুটে বেড়ান। নদীর পানিতে পা ডুবিয়ে বসে থাকুন কোনার কিনারায়। আকাশে মেঘের জন্মদিন। সেই মেঘের মধ্যে মেঘ হয়ে যান। তারপর মেঘ থেকে যখন বৃষ্টি হবে সেই বৃষ্টিতে ভিজুন। পানির প্রতিটি বিন্দুতে বয়ে বেড়ানো দুঃখ গুলোন মিশিয়ে দিন। তারপর ধুয়ে যাক। ধুয়ে যাক মুছে যাক বেদনার সকল স্তর।" এটা হবে হয়তো কোনদিন। যেদিন সামান্য হাসির কলোরবে জীবনকে তুচ্ছ জ্ঞান করে আমি নবজাতকের মতোন অনুভব করব জীবনকে। জীবনের ক্লেদ থাকবে না। এমনটা কবে হবে? কবে কোন ম্যাজিশিয়ান আমাকে আলিঙ্গণ করবে? অপেক্ষায় আচি কিন্তু!
জীবন যেমন অপেক্ষার একটা দায়ভার নিয়ে বয়ে যাই। মাঝে মাঝে হিসেব মিলাই। কিন্তু যে অংক বা হিসেব মেলাতে চেষ্টা করি তা থাকে স্বপ্নের জগতে। তাই বাস্তবের মাপকাঠি গুলোন আরালে থেকে অন্যকারোর কলকাঠি-ইশারায় ওলোট পালোট হয়ে যায়। তাই আর দুঃখের শেষ হয় না। তাই আমি একটা দুঃখের ফোন নাম্বার পেয়েছি। এই নাম্বারটায় ফোন করলে কেউ একজন ফোনটা ধরে। তার গলার স্বরে থাকে জীবনের তাবৎ অভিজ্ঞতা। কিন্তু আমার মতোন যারা স্বপ্ন বা ভালোবাসার কাঙাল তাদের জন্য করুণামিসৃত কোন কথা থাকে না। তাই সময়ের প্রতিটি হাসির ঝঙ্কার, প্রতিটি দীর্ঘশ্বাস দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়। আর তা হয়ে যায় হাহাকারের অট্টহাসি। সেই হাহাকারের আকারে বিকারে দুঃখের জন্ম হয় শুধু। অত:পর। আমি নির্ঝর সেই দুখের ধারায় অনেক বেশি দুঃখ সঞ্চয় করি। এভাবেই আমার দুঃখ প্রাপ্তি ঘটে।