রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই গানটি আমি শুনি খুব কম। বিশেষ করে এই বরষার কালে এ গান শোনার সাহস পাই না। বড় ভয়ঙ্কর গান। এই গানটা শুনলে আমার শুধুই কান্না পায়।
এমন দিনে তারে বলা যায়
এমন ঘনঘোর বরিষায়।
এমন দিনে মন খোলা যায়-
এমন মেঘস্বরে বাদল ঝরোঝরে
তপহীন ঘন তমসায়।।
সে কথা শুনিবে না কেহ আর,
নিভৃত নির্জন চারি ধার।
দুজনে মুখোমুখি গভীর দুখে দুখি,
আকাশে জল ঝরে অনিবার-
জগতে কেহ যেন নাহি আর।।
সমাজ সংসার মিছে সব,
মিছে এ জীবনের কলরব।
কেবল আঁখি দিয়ে আঁখির সুধা পিয়ে
হৃদয় দিয়ে হৃদি অনুভব-
আঁধারে মিশে গেছে আর সব।।
তাহাতে এ জগতে ক্ষতি কার
নামাতে পারি যদি মনোভার।
শ্রাবণবরিষনে একদা গৃহকোণে
দু কথা বলি যদি কাছে তার
তাহাতে আসে যাবে কিবা কার।।
ব্যাকুল বেগে আজি বহে যায়,
বিজুলি থেকে থেকে চমকায়।
যে কথা এ জীবনে রহিয়া গেল মনে
সে কথা আজি যেন বলা যায়-
এমন ঘনঘোর বরিষায়।।
আমার খুব ইচ্ছে করে বলে দেই। এই যে শ্রাবণঘন কাল। অনেক অন্ধকারে ধোয়াশার বৃষ্টিতে বসে থাকি চুপচাপ। টাপুর টুপুর বৃষ্টি নুপূর দেখি, শুনি। তখন হৃদয়টা হুহু করে ওঠে।
আমার ভালোবাসা তুমি অপেক্ষা করো আর একটি বৃষ্টি দিনের জন্য। আমি তোমাকেই ঘন বরিষায় বলে দিব আমার না বলা কথাগুলো। অন্ধকারে চোখ চিনি আর নাই চিনি, বৃষ্টি চিনতে ভুল হবে না। যে দুঃখের কাহন নিয়ে এতকাল ভেসে বেড়ালাম, তা ধুয়ে দিব শাওনে। আমার শাওন কন্যা, বৃষ্টি-বাদলার প্রেম, তোমাকে দিলাম।