কালকে খুব অদ্ভত একটা বিষয় হয়েছে। আমার প্রচণ্ড মন খারাপ অবস্থায় আমার বন্ধুকে ফোন করলাম। বললাম। তিনি আমাকে বুদ্ধি দিলেন অনেক শব্দে গান শোনার। এবং গান শোনা শেষে দুকাপ কফি বানাতে। এক কাপ আমার জন্য এক কাপ তার জন্য। আমারটা খেতে বললেন আর তার টা ফেলে দিতে বললেন। মজাটা এখানে নয়।
যেহেতু আমার বন্ধুটি আমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ তাই তার কথা অবশ্যই বিবেচ্য। আমি ফোনে কথা বলার সময় আপেক্ষিকতা বুঝতে পারলাম। আমি আমার অনুভূতিকে যদি বড় করে সময়কে টেনে লম্বা করি তাহলে বিষয়টা হবে এমন।
-নির্ঝর খুব উচ্চ শব্দে গান শোন
(আমি ভাবছি: কোন গান, কী ধরনের গান? কতটুকু শব্দে শুনব? আশে পাশের মানুষরা কী বিরক্ত হবে? গান কি দরজা বন্ধ করে শুনব নাকি দরজা খুলে দিয়ে হেটে হেটে শুনব?)
-ল্যাপটপে দেখ ফাতেহ আলী খানের গান আছে, আমার ফোল্ডারে ওইটা শোন।
(কম্পিউটার ফরম্যাট দিয়েছি। কোন হার্ড ড্রাইভে ব্যাকাপ রেখেছি! গানটার ট্যাগ ঠিক আছে তো? গানটার বিট রেট কত? কী ফরম্যাটে আছে?)
-আর দুকাপ কফি বানাও (তার মানে সে আসছে। আমার কাছে আসছে। আহা কি আনন্দ। আমার ঈদ অবশেষে একটু ভালো হতে যাচ্ছে। তাকে ঈদে কী খাওয়াব? কী নিয়ে গল্প করব? নতুন গাছগুলো কোথায় কোথায় রাখা যায় জিজ্ঞেস করতে হবে।)এক কাপ তোমার জন্য আর এক কাপ আমার জন্য (অবশ্যই সে আসছে। আনন্দে আমার চোখে পানি চলে এসেছে। বাসার সব ল্যাম্পগুলোন জ্বালানো দরকার। নরম আলোর বন্যা বইয়ে দেয়া দরকার। এয়ার ফ্রেশনার দেয়া দরকার। এসিগুলোন ছাড়া দরকার।)। তোমারটা তুমি খাও আর আমারটা ফেলে দাও (আমার ভূবন কিছুক্ষণের জন্য তছনছ হয়ে গেল। আমি হয়ে গেলাম বোবা। আমার অনুভূতিগুলোনও ভোঁতা। আমার এক সেকেন্ডও ভালো লাগছে না। ইচ্ছে ছুটে পালিয়ে যাই। কিন্তু কার থেকে কিসের থেকে পালাব তাও বুঝতে পারছি না।)।
আগেই বলেছি আমার বন্ধুটি আমার কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তাই তার সব কথাই শুনলাম। শুধু শুনালাম না আকুতি গুলোন। লিখে ফেললাম একটি কবিতা (যা এই পোস্টের আগের পোস্টটি: তোমাকেই চাই)। এভাবেই একটি কবিতার জন্ম হলো। খারাপ কী? লাভ হলোই তো। নগতে একটা কবিতা পেলাম।
ঈদের আগের দিন খুব আয়োজন করে গাছ কিনতে গেলাম। এক বন্ধুকে অনোরোধ করেছিলাম কিনে দেয়ার জন্য, তিনি সময় পান নি। আর এক বন্ধুকে অনুরোধ করলাম, তিনিও সময় পেলেন না। তাই শেষ বিকেলে আমার সাবেক কলিগ ইমরান হাসানকে সাথে নিয়ে গাছ আনতে যাই।
আমার বাসার কাছে ফার্মগেইট-গ্রীনরোড মোড়। সেই মোড়েই গাছের দোকান। খুব দ্রুত ৬টা গাছ কিনে ফেলি। ৪টা এখন ড্রয়িং রুমে বাকী দু’টা বাড়ান্দায় ঝোলানো। আমার বাসাটায় এখন টুকরো টুকরো সবুজ। বড় আনন্দের ব্যাপার। গাছের সাথে আনন্দ কী?
একাকীত্ত্ব কাটানোর জন্য গাছ ভালো একটা বিষয়। আমি গাছগুলোর সাথে কালকে অনেক্ষণ গল্প করেছি। প্রত্যেকের সাথে আলাদা করে। দেখলাম কথা বলতে খারাপ লাগছে না। এক ধরনের শান্তি বা আশ্রয়।
আমি আজকেও গাছগুলোতে পানি দিলাম। পাতাগুলোন যত্ন করে পরিষ্কার করে দিলাম। এবং কথা বললাম।
প্রিয় পাঠক, এই ছবিটা আমার গাছের নয়। প্রায় এক বছর আগে তোলা একটি ছবি। ছবিটা আমার ফ্লিকারে পোস্ট করেছি। আমার নিজের গাছগুলোর মতোন এই গাছটির নামও আমি জানি না।