ছবির মানুষটার নাম পাগলী। হয়তো ছোট বেলায় এর কোন নাম রেখেছিল বাবা মা। কিন্তু বড় হয়ে যখন বুঝেছিল তাদের মেয়ে কিছু শোনেও না বা কিছু বলতেও পারে না তখন তার নৈশব্দের জগতের সাথে সাথে নামটাও হারিয়ে গেছে। আমি চেষ্টা করি নি নামটা জানার। কিন্তু এই মুহূর্তে জানতে ইচ্ছে করছে।
আমি একে চিনি ছোটবেলা থেকেই। আমরা দু’জন একি গাঁয়ে থাকতাম। ও জন্মেছে গরীব পরিবারে আর আমি বিত্তের মাঝে। বয়সে সে আমার চেয়ে ৩বছরের বড় মনে হয়। আমাদের বাড়িতে মাঝে মাঝে কাজ করতে আসত। কথা বুঝত না কিন্তু ইশারা বুঝত। অসম্ভব বুদ্ধিমতি মেয়ে। চোখের দৃষ্টি তার ভয়ঙ্কর রকমের সার্প।
এই ছবিটা তুলি ২বছর আগে। এই নির্বাক মেয়েটির বিয়ে হয়েছিল আগের রাতে। পরের দিন সদ্যস্নাতা অবস্থায় এই ছবিটা তোলা। যার সাথে বিয়ে হয়েছে এ তার দ্বিতীয় বউ। আগের বউও আছে। এই রকম একটা মেয়েকে আর কে বিয়ে করবে? আমি অনেক খুশি হয়েছিলাম। মেয়েটার তবুও তো একটা সংসার হলো। আমাদের কুড়িগ্রামের মানুষেরা এমনিতেই জীবন থেকে বঞ্চনা পেয়ে অভ্যস্ত। তার উপরে পাগলীর জীবনটা তো বঞ্চনার মহাসাগর।
আমি যখন ওদের বাড়ির পাশ দিয়ে মটর সাইকেলে যাচ্ছিলাম। যাচ্ছিলাম প্রায় ৮বছর পরে। যাওয়া হয়ে ওঠেনি। অনেক সভ্য হয়ে গিয়েছিলাম তো, তাই আর অনেক কিছু দেখি নাই। আমি যখন তার বাড়ির কাছে দাড়ালাম। অনেকেই এলো কথা বলতে। অনেকেই অনেক কাল পরে আমাকে দেখল সেদিন। সে যখন আমাকে দেখে চিনতে পারল হাসতে হাসতে ছুটে এলো। আহারে! কি সুন্দর হাসি। এ হাসি দেখার সৌভাগ্য কারো হবে না।
পাগলি তুমি এ লেখা পড়তে পারবে না। তুমি পড়তে জান না। ইন্টারনেট তোমার জন্য তৃতীয় প্রজন্মের সাইন্স ফিকশন। তবুও আমি কোন একদিন এই লেখাটা দেখাব। তুমি কি বুঝবে জানি না। কিন্তু তোমাকে বুঝাতে চাই মানুষের প্রতি মানুষের মমতা এখনও আছে। সুখে থাক। ভালো থাক। অনাবিল হাসি থাক তোমার মুখে।
***********************************************************
এই লেখাটা পোস্ট করার পরে আমার মা’কে দেখালাম যে একে চিনে কীনা! মা বললেন ওর স্বামী ওকে ছেড়ে চলে গেছে। ও নাকি অনেক কান্নাকাটি করেছে। কিছুই জানতে চায় না। শুধু স্বামী কে এনে চায়। আহারে! অবুঝকে বুঝাবে কে? জগৎ বড়ই স্বার্থান্বেষী!