একজন নাস্তিককে সাইজ করার সবচেয়ে সহজ উপায় কি?

by nirjhar
4 minutes read

একজন নাস্তিককে সাইজ করার সবচেয়ে সহজ উপায় কি?

ধরা যাক আপনি একজন ধর্মভীরু মুসলিম। আপনি দেখছেন একজন নাস্তিক সমানে আপনার ধর্মকে আঘাত করছে, যাচ্ছে তাই ভাষায় গালি গালাজ করছে।

আপনি তখন বিন্দুমাত্র উত্তেজিত না হয়ে শান্ত মাথায় তাঁকে কিছু তথ্য দিতে পারেন।

শোনো ভাই নাস্তিক, ইসলাম ধর্ম অন্যান্য ধর্মের তুলনায় নতুন হলেও এর বয়েস প্রায় ১৪০০ বছর হয়ে গেছে। এটি এখন এই পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্ম। এটি পালন করেন পৃথিবীর প্রতি চারজনে একজন এখন মুসলিম। পৃথিবীর প্রায় ৫০ টি দেশ এখন মুসলিম প্রধান দেশ।

এই রকম একটি বিশ্বজনীন ধর্ম বা তাঁর নবীকে আপনারা ৮৪ জন ব্লগার কেন, ৮৪,০০০ ব্লগার মিলেও গালাগালি দিয়ে কিছু করতে পারবেন না। তবে আপনি গালাগালি দিতে চাইলে চালিয়ে যান আমার কোন অসুবিধা নেই। আমি আমার নবীর আদর্শ অনুসরণ করি। তাঁর পথে যে ব্যক্তি কাঁটা বিছিয়ে রাখতেন, তাঁকে আমাদের নবী সেবা করেছেন।

তাই আপনার কোন ক্ষতি করা তো দূরের কথা, আপনার কোন বিপদ হলে আমি সবার আগে এগিয়ে আসবো। আপনি অসুস্থ হলে আমি প্রাণপনে চেষ্টা করবো আপনাকে সেবা করতে।

আজকের এই পৃথিবীতে কতজন মুসলিমের কাছে আমরা এই উদারতা, এই মানবতা আশা করি। আজকে মুসলিমদের ব্র্যান্ড ইমেজ হচ্ছে গলা কাট, বোমা মার। মুখে শান্তির ধর্ম ইসলাম বলে চাপাতি নিয়ে ঝাপিয়ে পড়ে জবাই করা।

তাই আমাদের দেশে মুসলমানদের মধ্যে প্রচুর ধার্মিক, কিন্তু ধার্মিক হলেই কি মানবিকতা বিসর্জন দিতে হবে? এ কোন ধর্মের শিক্ষা? এই শিক্ষা তো হযরত মোহাম্মদ (সঃ) দিয়ে যান নি। তাহলে কি রহস্যময় কারণে মুসলমানরা আজকে এত উগ্র, ভায়োলেন্ট এক গোষ্ঠীতে পরিণত হয়েছে!

কারণটা খুব একটা রহস্যময় নয় আমার কাছে।

আজকের পৃথিবীতে মুসলিমদের মধ্যে শিক্ষার হার হচ্ছে ৩৮%, তাঁর মানে হলো প্রায় প্রতি তিন জন মুসলমানের মধ্যে দুইজন অশিক্ষিত। আমরা মতে এই একটা তথ্যই যথেষ্ট বোঝানোর জন্য আজকের বিশ্বে মুসলমানদের এই নৈরাশ্যজনক চিত্রের জন্য।

আপনি কটা মুসলিম প্রধান দেশ আজকে দেখাতে পারবেন যারা জ্ঞান-বিজ্ঞান আর উন্নতির শিখরে অবস্থান করছে? আজ যদি আরব দেশে তেল না পাওয়া যেতো তাহলে এই সব ধনকুবের শেখ, আমীর রা কোথায় থাকতো? কোথায় থাকতো পেট্রোডলারের টাকায় কেনা ক্যাডিলাক, মার্সিডিজ? দেখা যেতো এখনও তাঁরা মরুভূমির ঠা ঠা রোদে উটের পিঠে এক তাঁবু থেকে আরেক তাঁবুতে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এই দেশগুলোর বিশ্ববিদ্যালয়, কলকারখানা সবই চলে বিদেশ থেকে জনশক্তি আমদানী করে।

আরেকটি মুসলিম প্রধান দেশ যার উন্নতিকে মডেল হিসাবে অনেক মুসলিম মনে করেন, সেই মালেশিয়ার অর্থনৈতিক উন্নতির পিছনে সেখানকার চাইনিজ অধিবাসীদের অবদান সবচেয়ে বেশী। মালেশিয়ার অর্থনীতির প্রায় ৭০ ভাগ তাঁরা নিয়ন্ত্রণ করে।

অথচ আজকের মুসলিম বিশ্বের এই শোচনীয় অবস্থা থেকে বুঝতেই পারা যাবে না যে আজ থেকে হাজার বারোশো বছর আগে চিত্রটি ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন।

আপনি কি জানেন সেই সময়টিতে মুসলিম শাসিত স্পেনের কর্ডোবাতে যখন স্ট্রীট ল্যাম্প ছিলো, সুরম্য অট্টালিকা এবং রানিং ওয়াটার ছিলো তখন লন্ডন, প্যারিস এই সব শহরগুলোতে লোকজন বলতে গেলে কুড়েঁ ঘরে বাস করছে।

স্পেনের কর্ডোবা, টলেডো, গ্রেনাডা এই শহরগুলো ছিলো এক একটি জ্ঞান বিজ্ঞানের সূতিকাগার। এখানে মুসলিম শাসকের রাজত্বে মুসলমান, ইহুদী আর খ্রীষ্টান স্কলাররা একসাথে হয়ে কাজ করতো। তাদের সবচেয়ে বড় অবদান যেটি সেটি হলো গ্রীক এবং রোমান যত জ্ঞানের আধার সেগুলো তারা ট্রান্সলেট করে নিয়ে আসছিল আরবী এবং অন্যান্য ইউরোপীয়ান ভাষায়। তারপর ব্রিটিশ পন্ডিত মাইকেল স্কট যখন স্পেনে আসলো তিনি এইগুলো ইংল্যান্ড, ফ্রান্স এবং ইউরোপের অন্যান্য জায়গায় ছড়িয়ে দিলেন। এই জ্ঞান-ভান্ডার পরে ইউরোপের রেঁনেসা জাগাতে সাহায্য করে যেটি ইউরোপ বা পাশ্চাত্যের জ্ঞান বিজ্ঞানে এগিয়ে আসতে বিরাট ভূমিকা রেখেছে।

আজকে যেমন হার্ভার্ড, এম আই টী, অক্সফোর্ড, কেমব্রীজ নামগুলো জ্ঞান বিজ্ঞান চর্চার উৎকর্ষতার শীর্ষে, তেমনি এক সময়ে মুসলিম বিশ্ব ছিল জ্ঞান চর্চার নেতৃত্বে। আর কেনই বা তা হবে না। জ্ঞান চর্চা ইসলাম ধর্মে সব সময় উৎসাহিত করা হয়েছে। হযরত মোহাম্মদ স্বয়ং বলে গেছেন যে জ্ঞান অর্জনের জন্য প্রয়োজন হলে সুদূর চীন দেশেও যাও।

তখনকার মুসলমানরা নবীর বাণীতে উদ্বুদ্ধ হয়েছিল। সেই যুগের জ্ঞান বিজ্ঞান মূলত গ্রীক আর রোমান সভ্যতা লদ্ধ জ্ঞান। মুসলিমরা এই জ্ঞান খুব দ্রুত করায়ত্ত করে ফেললো। অন্যদিকে সেই যুগের খ্রীষ্টানরা গ্রীক আর রোমান সভ্যতা বর্জন করে চলতো কারণ গ্রীক রোমানরা ছিল প্যাগান বা দেব-দেবী উপাসক। কিন্তু মুসলিমদের মধ্যে সেই উদারতা এবং জ্ঞান আহরনের তৃষ্ণা ছিল। তাই আমরা অষ্টম শতাব্দীতে দেখি আমরা আধুনিক মুসলিম আর গোঁড়া খ্রীষ্টানকে। ফলাফল যা হবার তাই, আজকের পুরো উলটো। মুসলিমরা জ্ঞান বিজ্ঞান, শৌর্যে-বীর্যে এগিয়ে গেল আর খ্রীষ্টানরা পড়ে রইলো অন্ধকার যুগে।

আজকে পাশার দান কেন পালটে গেল? উত্তর তো খুবই সহজ। যখন থেকে মুসলিম বিশ্ব জ্ঞান চর্চা থেকে দূরে সরে আসলো তখন থেকেই তাঁদের পতনের শুরু।

বাংলাদেশের হেফাজতে ইসলামের প্রতি তাই অনুরোধ, ঢাকার দিকে লংমার্চ না করে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, লাইব্রেরীর দিকে লং মার্চ করুন। যেই কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে আপনারা এই আয়োজন করছেন সেটি দিয়ে সমাজ, জাতি, দেশের উন্নয়নের জন্য কাজ করেন। দেশের দরিদ্র অন্ধকারে থাকা মুসলমানদের শিক্ষিত করে তুলুন। দেখবেন নাস্তিকতার জুজু এমনিতে দূরে সরে গেছে।

কিন্তু আমি জানি আপনারা সেটা করবেন না। কারণ মানুষকে অন্ধকারে রাখাটাই আপনাদের সবচেয়ে বড় কাজ। সেটাতেই আপনাদের সবচেয়ে সুবিধা। আপনাদের সবচেয়ে বড় শত্রু কে জানেন? না, তিনি নাস্তিক নন। তিনি হলেন জ্ঞানের আভায় আলোকিত একজন মুসলিম। কারণ সেই মুসলিম সবার আগে আপনাকে এবং আপনার ধর্মীয় উন্মাদনার হোলি খেলার আদর্শকে বর্জন করবে।

You may also like

Leave a Comment

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More

Adblock Detected

Please support us by disabling your AdBlocker extension from your browsers for our website.