একটা কবিতা লিখব এটি আমার ১৯বছর বয়সে লেখা

by nirjhar
3 minutes read

একটা কবিতা লিখব এটি আমার ১৯বছর বয়সে লেখা একটি কবিতা। আমার গ্রামে বড় হয়ে ওঠার একটা অংশ এতে আছে। সেই সময়ে উদীচী’র অনুষ্ঠানে বোমা হামলা হয়েছিল। অনেক কষ্ট পেয়েছিলাম। ফুলকুমার নদীর ধারের এই ছেলেটি সেদিনের কষ্ট বুকে জমা করে রেখেছিল।

এই কবিতায় হরিমতি’র কথা লিখেছি। আমার শৈশবের অনেক প্রশ্নের উত্তর মেলানো চেষ্টার সে স্বাক্ষী। সে কোথা থেকে আসত সব সময় ভাবতাম। তখন আমাদের বাড়ির চারপাশের ফুলকুমার নদীর ওপারে যাওয়া হয়ে ওঠেনি। খুব ছোট বেলায় হরিমতির বয়ে আনা টেংড়া মাছ আমার হাতে কাটা ফুটিয়ে দেয়। তাই থেকে তাকে আমি টেংড়া নামেই ডাকতাম। বলতাম হরিমতি টেংড়া। খুব রাগ করত। বেচারা কবে মরে গেছে জানি না। এখন তাকে পেলে হয়তো খুব আয়োজন করে ছবি তুলতাম তার। এই কবিতার সাথে লাইভ হরিমতি। ইউটুবে স্থান করে নিত। হরিমতি নেই। কিন্তু তার ‘বাপই’ রয়ে গেল। রংপুর অঞ্চলে ছোট ছেলেকে বাপই বলে।

অন্য চরিত্রগুলো নিয়ে সময় করে লিখতে হবে। আয়োজন করে লিখতে হবে। বর্ণিল সম্ভাবনা গুলো মলিন করতে খুব মায়া লাগছে। যাদের কথা লিখতে চাই তারা সবাই শুদ্ধ মানুষ। তাদের মলিনতা কখনও ছুঁতে পারে নি। অন্তত এই কথাটি আমি বিশ্বাস করি। প্রিয় শৈশব; প্রিয় ছেলেবেলা; আমারে তুমি অশেষ করেছ।

একটা কবিতা লিখব;
এই ধ্যান অনেক কাল ধরে
মিশে আছে মনে
আমার ভাবাতুর চেতনা পরে
কি লিখব সে কবিতায়?
ভাবি শুধু ভাবি
দিনরাত অবিশ্রান্ত
পড়ার টেবিলে-পার্কে-আড্ডায়,
শাওয়ারের শব্দে-বাথরুমে
পাইনা কিছুই খুঁজে।

একটা কবিতা লিখব;
নুতন কথার একটা কবিতা
কি লিখব সে কবিতায়!
ভাবি আর ভাবি………….।

একবার ভাবি
কবিতায় লিখি
ধরলার চরে সেই
নির্বিকার দুই ভিখারিনীর কথা,
যার হাত সবসময়’ই থাকে শূন্যে
প্রত্যাশায়,
দশ-বিশ-পঁচিশ পয়সা করে
সারাদিনে জমে যায় বেশ
খোলা আকাশের সূর্য কোনদিন তাতে
করে না চাঁদাবাজি
শুধু নির্বিকারভাবে দেয় তেজ
যেন হলুদ জন্ডিস মার্কা স্বপ্ন দেখায়।

একটা কবিতা লিখব;
একটা কবিতা লেখা উচিৎ
কি লিখব সে কবিতায়!
ভাবি আর ভাবি………..।

ইচ্ছে করে
কবিতায় লিখি
পয়ড়াডাঙার সেই তেতুল গাছ,
বিলের কিনার ঘেঁসে আছে দাড়িয়ে
বৃহৎ সুন্দর হয়ে
সবুজের ভান্ডার যেন
কতকাল থেকে কে জানে!
সারাদিন তার ডালে
পাখির ছুটোছুটি ক্লান্তিহীন
সবুজের বুকের মাঝে,
আবছা ছায়ায় যেন ভাসে
নিচের সবুজ জলে
যেন আমিও সবুজে আছি মিশে।

একটা কবিতা লিখব;
সুন্দর একটা কবিতা
ভাবনায় আসে না কিছু
আসে সীমাহীন অজ্ঞতা।

ভাবি কবিতায় লিখে ফেলি
রিম ঝিম বৃষ্টি
সুর বাজে ঝাপতালে
টিনের চালায়,
বৃষ্টির কণাগুলো আসবে হাওয়ায় ভেসে
সিক্ত করবে শুধু আমার খাতা
আলতো ভাবে,
যেন সোহাগে বুলিয়ে দেবে
মমতার পরশপাথর,
ছোঁয়াতে সোনার খাতায়
লিখে দেব
তার মহা জয়গান
প্রভাত আলোয়।

একটা কবিতা লিখব;
একটা কবিতা লেখার অপেক্ষায়
আছি বসে
কি লিখব সে কবিতায়!

ভাবি কবিতাতে এঁকে দেই
মজিরনের হাত দু’টো,
সারাদিন অবিরাম
ঠুকুস ঠুকুস
কয়লা ভাঙে,
প্রতিটিন দুইটাকা করে
মালিক দেবে
সে…………ই সাঁঝে,
ভিতরটা তার
ইট ভাটার কয়লার মত জ্বলে
উদরের সংগ্রাম অব্যাহতভাবে চলে
উপায় নেই তার
জীবন গেছে বলী
প্রার্থনা তার আজ
কখন আসবে সাঁঝ।
একটা কবিতা লিখব;
নুতন ধারার একটা কবিতা
দূর নিরুদ্দেশের যাত্রায়
প্রিয়জনের ব্যাথায়;
কি লিখব সে কবিতায়!

লেখার বাসনাতে
লিখে দেই
মন্টু মিঞাকে,
প্রিয়জন ছেড়ে
মফিজ হয়ে বাসের ছাদে,
দড়ির বেষ্টনীর ফাঁদে
জীবন মুঠোয় ভরে,
চলে দূর অজানায়………….
যেখানে ফলেছে ফসল আগে;
মফিজ অপবাদ ঘাড়ে
করে তাড়া বারে বারে
রোজগার করে আনবেই কিছু,
অনাহারে আছে প্রায়
তার বঁধু-দুধের শিশু।

একটা কবিতা লিখব;
কবিতা একটা লিখতেই হবে
ভালোবাসা মায়ার কোন কবিতা
বঞ্চিত জীবনের কবিতা
কার কথা লিখব?

ভাবনার চোখে আসে
মনের অজান্তে ভাসে
মলাতি বুড়ির কথা,
খুব সকালে সে আসত
শীর্ণ মলিন কান্তি
কুকড়িয়ে শুকিয়ে যাওয়া,
তবু মাথায় ধরা ভারে
রাশি রাশি মোয়া
বেড়াত ফেরী করে,
চিরকাল থাকবে মুখে মিশে
সেই সকালগুলোর
গোল গোল মোয়ার স্বাদ,
জানিনা কি ভেবে সে
জীবনের শেষ অবধি
কুকড়িয়ে যাওয়া শরীরে
মায়ার চোখে তাকিয়ে
করত ফেরী স্বর্গ প্রসাদ।

আবার চেতনায় জাগে
অনেক দিন আগে
হরিমতির কথা;
যাকে ডাকতাম টেংড়া বলে,
প্রতিদিন আসত সে
জেলে পাড়া থেকে
মাছের ডালা হাতে
ফুলকুমার নদী
পেরিয়ে,
ইচ্ছে করে কবিতায় শুধু বলি
তার চোখের দুঃখ ভরা হাসি
আর সেই ডাক;
‘মাছ নেবে গো মাসী।’

একটা কবিতা লিখব;
রক্তের উষ্ণতা মাখা কোন কবিতা
ভরা শুধু প্রখর খরতা
কি লিখব সে কবিতায়!

ইচ্ছে করে;
কবিতায় রক্তগঙ্গা দিই বইয়ে
সেইসব ঘাতক পশুর,
সুরের আবেশ ভরা মধ্যরাতে
যারা করে বোমা হামলা
নিস্প্রান করার বাসনায়
সমাজটাকে,
আদিম ক্রধে ভরে
তাদেরকে জড়ো করে
মনের ঘৃনা আক্রোশ মেশানো
ভয়াবহ এটম বোমাটি
দিই ছুঁড়ে,
নিশ্চিহ্ন হয়ে যাক
পৃথিবীর বুকে
প্রসুনের বিরুদ্ধাচারী
সেইসব কীট
যারা সুন্দর স্বপ্নের ঘটায় ব্যাঘাত
নড়ে যায় ভিত।

একটা কবিতা লিখব;
একটা কবিতা লেখার বাসনায়
আমৃত্যু থাকব আমি বসে,
ভয় নেই কিছু হারাবার
আমি লিখবই অবশেষে
কোন একটি কবিতা সাহসে।।

০১.০৫.১৯৯৯

You may also like

Leave a Comment

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More

Adblock Detected

Please support us by disabling your AdBlocker extension from your browsers for our website.