তখন স্কুলে পড়ি। মনে হয় ১৯৯৩ সাল। আমাদের নাগেশ্বরীতে তখন সবু ভাইয়ের দোকান রমরমা। ওনার দোকানে হাল আমলের সব অডিও টেপ পাওয়া যায়। পাওয়া যাওয়ারি কথা, ঢাকা থেকে উনি নাগেশ্বরী প্রত্যাবর্তন করেছিলেন। রাজধানীর কিছু গন্ধ থাকবেই, এটা স্বাভাবিক। আমার কৈশরের বেশীরভাগ অডিও টেপ তার দোকান থেকে কেনা।
একদিন দোকানে গিয়ে দেখি নীল সার্ট পড়ে একজন লোক গীটার হাতে গম্ভীর। এলবামে লেখা সুমনের গান, তোমাকে চাই। এমন অদ্ভুত নামের এলবাম প্রথম দেখা। কিছু না ভেবেই বাসায় কিনে নিয়ে গিয়ে শোনা শুরু করলাম।
সেই সময় আমি মোটামুটি মানের কবি। কবিতা পড়ছি, লিখছি, সারাদিন কী লিখব, কী লিখব একটা ভাব। ভাবের এই চরম দিনে সুমনের গান শুনে অভাবী হয়ে গেলাম। এতো গান নয়, বিশুদ্ধ কবিতা। এর পরের টা আর গান শোনা বলব না, গান গেলা বলব। সেই থেকেই শুরু। আদ্যবধি আমার প্রিয় শিল্পী। প্রিয় কবি।
জীবনের অনেক বড় একটা সুযোগ হাতছাড়া হয়ে গেল। ইচ্ছে ছিল লিওনার্দ কোহেনের একটা লাইভ কনসার্ট শোনার, হলো না। কবি চলে গেলন ওপারে আমাকে ব্যাবিলনের সেই নদীর মধ্যে ভাসিয়ে। আফসোস থেকে গেল। কিছু কিছু মানুষের জন্য পরকালে আমার অনেক বিশ্বাস। যদি একবার দেখা হয়ে যায়! সেই তালিকা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়ে যাচ্ছে। একসময় গিয়ে হয়তো লক্ষ্য করব জীবনের একটা বড় সময় কেটে গেছে তালিকা করতে করতে। এটাই হয়তো মধ্যবিত্ত। এটাই হয়তো বার্ধক্য! বুড়ো হয়ে যাচ্ছি আসলেই। তবে আফসোস রাখার পক্ষ্যে আর আমি নাই। জীবনের একটা ইচ্ছা এবার পূরণ করবই তা হলো কবীর সুমনের সামনে বসে একটা গান শোনা। কবে হবে জানি না। তবে হবে আমি নিশ্চিত।
আজকে একটা অসম্ভব সুন্দর উপহার পেলাম। কবির সুমনের বই, তাও আবার আমার নাম লিখে অটোগ্রাফ সহ। ধন্যবাদ Tamanna Porna. মানুষের মন ভালো করা মহৎ কাজ। আপনি মহানদের তালিকায় চলে গেলেন।