তিন দিন হয়ে গেল। আর কয়েকদিন পরে আমরা পুরো বিষয়টা ভুলে যাব। ক্ষমা করা এবং ভুলে যাওয়ার বিষয়ে আমাদের রেকর্ড আছে। আমরা ভুলে যেতে পছন্দ করি। এটাও আমি পজিটিভ আকারে দেখছি। সুন্দর স্বপ্ন বা সুন্দর মুহূর্ত মনে রাখতে হয়। সেগুলো কম বলেই বেশীরভাগ বিষয় আমরা ভুলতে শিখি। এটা দোষের কিছু না।
আমি পেশায় অন্যের সমস্যার সমাধান করি টেকনোলজি দিয়ে। ছোট ছোট বাচ্চাদের ব্রেন ওয়াশ করে জঙ্গি বানানোর সমস্যা আমার বিষয় না। কিন্তু সমস্যা হলো আমার মেয়ের বয়স প্রায় ৬ হতে চলল। আমি চিন্তিত হব। এটাই স্বাভাবিক।
আমি মোটামুটি নিশ্চিত ছিলাম যে এখন কার সময়ের বাচ্চারা আগের গঠনমূলক মানবিক পাঠটা করে না। কিন্তু আমাকে অবাক করে ফারাজ উদাহরণ দিয়ে গেলেন। যত বার ফারাজের ছবিটার দিকে দেখছি। আমি আশায় বুক বাঁধছি। এই বাংলাদেশকে শেষ করার কোন উপায় নাই। বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে এই ছেলেটাকে বীরের খেতাব দেয়া উচিৎ রাষ্ট্রিয় ভাবে। একে রোল মডেল করে পাঠ্য বইয়ে পাঠ করানো উচিত যাতে আমাদের বাচ্চারা শিখতে পারে। ফারাজকে স্যালুট করার কোন আক্ষরিক উপায় খুঁজে পাচ্ছি না। ফারাজ’ই বাংলাদেশ।
আমি পুরো ঘটনাটা অনেকবার অনেকভাবে চিন্তা করলাম। যারা হত্যাযজ্ঞ চালেয়েছে তাদের ছবি দেখলাম। বিশ্বাসে টগবগে কিছু যুবক। তাদের চোখে কোন কনফিউশন নেই। আমরা যারা বলছি কাজটা জঘন্যতম অন্যায় হয়েছে, একবারও কি ভাবছি সেই যুবকেরা এটাকে অন্যায় মনে করেছে কিনা? এই ঘটনা আমাদেরকে অনেক গুলো শিক্ষা দিল।
১. আমরা যদি ধর্মীয় অনুভূতির ভয়ে মুক্ত চিন্তা করতে না দেই নিব্রাজের মতোন তরুনেরা মুদ্রার অপর পিঠটা দেখতে পারবে না। বিশ্বাস ভালো বিষয় কিন্তু অন্ধ বিশ্বাস মোটেও ভালো কিছু না। সব কিছু ভেরিফাই করে বিশ্বাস করা উচিৎ। মহান রাব্বুল আলামিন আমাদের লজিক নামক একটা গুণ দান করেছেন। আমরা যদি সব দরজা জানলা বন্ধ করে দিয়ে অন্ধ করে রাখি, করুণাময়ের দেয়া বিশাল গুণ লজিক ব্যবহার করা হবে না। এটা মানব জাতির জন্য অনেক বড় অপচয় হবে।
২. লক্ষ করে দেখুন যারা আমাদের তরুণদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে নিরীহ মানুষদের হত্যা করল তারা কিন্তু অনেক আগে থেকেই তাদেরকে লোক সমাজের আড়ালে আত্মগোপনে রেখেছিল। তার মানে তারাও ভয় পায়, তাই সাধারণ পরিবেশ থেকে আইসোলেটেট করে রেখেছিল (পত্রিকার রিপোর্ট থেকে জানা) তাদের।
৩. আই.এস কোন দলের নাম না। এটা একটা মতবাদ বা বিশ্বাস। কোথাও এরা আল-কায়েদা কোথাও বোকো হারাম, আনসারুল্লাহ বাংলা, জে এম বি। যতবার শুনি বাংলাদেশে আই.এস নেই আমার অবাক করা হাসি পায়। যারা বলেন তারা কি কোন পড়াশুনাই করেন না!
৪. গুলশানের ঘটনাটা একটা বিশ্বাসের প্রতিষ্ঠার ঘটনা। আমরা সাধারণ মানুষেরা জানি তাদের বিশ্বাসটা ভুল কিন্তু যারা ভুল করল তারা তো বিষয়টা জানতে পারল না। এখন আমরা তাদের গালাগালি করে সময় নষ্ট না করে ফারাজের মতো বীরদের কথা বেশি করে বলি। এবং ভবিশ্যতের করনীয় ঠিক করি। আর যাই হোক, এইরকম ঘটনা আর কাম্য না।
৫. ধর্মীয় বিশ্বাস একটা অনেক বড় দার্শনিক ব্যাপার। এটার বিষয়ে সবার জানা উচিৎ। কিন্তু এটা জানতে সবাইকে আলেম বা মুফতি হতে হবে এমন কোন কথা নেই। ইন্টারনেটের এই যুগে এমন কিছু নেই যা জানা যাবে না। যারা ধর্মে বিশ্বাস করে না, তাদের যুক্তিগুলোও সবার জানা উচিৎ তাহলে ধর্ম বিশ্বাসীরা তাদের বিশ্বাসকে ঝালিয়ে নিতে পারবেন। শুধু একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে। আপনার বিশ্বাস প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে অন্যের বিশ্বাসকে আক্রমন করবেন না।
যখন একে একে ব্লগারদের হত্যা করা হলো, আপনারা মনে মনে খুশি হলেন। ভাবলেন যাক কিছু নাস্তিক কমল। যখন আগুন লাগে তখন দেবালয়ও পোড়ে এবং ঘরও পোড়ে। এবার সেই আগুনে ঘর পুড়ল আমাদের। আমাদের এখন একদম মূল থেকে শুরু করতে হবে। একদম প্রাইমারি স্কুল থেকে। ভালো গ্রেড আর বেশী বেশী পাশের সাফল্যে দিয়ে মানবিক মূল্যবোধ জাগৃত হয় না। সবার জন্য দরজা জানলা খুলে দিন। মঙ্গল হবে।
তিন দিন হয়ে গেল। আর কয়েকদিন পরে আমরা
4
previous post