বাংলাটা মজলিসি কায়দায় না লিখলে আমার জন্য ঠিক জমে না। একটা লেখায় যদি ডালপালা না ছড়িয়ে, রসিয়ে রসিয়ে লিখতে না পারি তখন কেমন জানি লাগে। এত কথা বলছি কারণ গরমে মাথা আক্ষরিক অর্থেই খারাপ হয়ে গেছে। সকাল থেকে আছি রাঙ্গালীর বস, কুড়িগ্রামে। আমার গ্রামের বাড়ি। জুন মাস এবং বোনাস হিসেবে লাগাতার লোড শ্রেডিং। এই আজগুবি গরমে আমার চরম অবস্থা। অনেকক্ষণ এলোপাথারি ভাবার পর উঠে গিয়ে বইয়ের আলমারি খুললাম। আমার অনেক পুরোনো বই এই বাড়িতে রাখা। ঢাকার বাসায় এতো বই রাখার জায়গা নেই। যে বইটির ছবি এখানে এটা আর্কাদি গাইদারের লেখা The Blue Cup বা নীল পেয়ালা। আমার জীবনের অন্যতম বড় ঘটনা এই বই। সম্ভবত বইটি আমাকে দেয়া হয় ১৯৮৪ সালে অথবা ৮৫ তে। আমার জন্য কেনা এটা প্রথম বই। আমার মা বইটি আমাকে দেন। আর পাশেরটা আমি নিজে কিনেছি ২০০৩ সালে। কাকরাইলের পুরান বইয়ের দোকান থেকে। আমার মায়ের দেয়া ভার্সনটি বাংলা আর নিজের কেনাটা ইংরেজি। মূল বইটি ছিল খাঁটি রাশান ভাষায় লেখা। ইচ্ছে আছে রাশান ভাষা শিখে মূলটাও পড়ার। তবে সেটা মনে হয় অনেক কাঠ-খর পোড়ানোর মতো ঘটনা হবে। এখন পাঠক মনে প্রশ্ন আসতে পারে এতো প্যাঁচাচ্ছি কেন! ঘটনা হলো আমার জীবনের প্রথম বইটি আমি এখনো বুঝতে পারি নাই। না বুঝতে পেরে ইংরেজি ভাষাতেও চেষ্টা করেছি, লাভ হয় নাই। আজকে এই ৩৭ বছর বয়সে আবারো পড়া শুরু করব। ছোট বই। শেষ হয়ে যাবে। দেখি বুঝি কী না! প্রথমে বাংলাটা পড়ব পরে ইংরেজিটা। বাংলাটা বেশ ঘটমটে অনুবাদ। যদি বুঝতে পারি ইংরেজিটার একটা সহজ অনুবাদ নিজেই করে ফেলব। অবশ্যই ভাবানুবাদ। বইয়ের আলমারি ঘেটে অনেকগুলো রেয়ার বই উল্টে-পাল্টে দেখলাম। এখন বেশ ভালো লাগছে। যেহেতু এখন জুন মাস, যেহেতু এখন বর্ষাকাল এবং যেহেতু আমি জেগে আছি তাই লিখলাম। লিখছি আর জানালার অন্ধকারে পুকুর পারে নিজের হাতে লাগানো কদম গাছটি দেখার চেষ্টা করছি। ইচ্ছে ছিল একটা ‘নীপবন’ করার কিন্তু ছাগলে আর গরুতে সেটা হতে দেয় নি। গাছ আছে মাত্র দুইটা। আষাঢ়ের ১৩ তারিখে বৃষ্টি হলে ভালো হতো। গরমে কষ্ট পেতাম না। আর দীর্ঘদিন পরে এই পুরানো বিশাল বাড়িটাতে ভিজতে পেতাম একটু। আহারে কতকাল বৃষ্টিতে ভিজি না!