মা বেড়াতে এসেছেন আমার সাথে পহেলা বৈশাখ কাটাবে বলে। সাথে নিয়ে এসেছে গাছের পাকা পেপে আর ঘরের মুরগি (আসলে মোরগ)। মোরগ রান্না করেই এনেছেন, আমার মাথায় ঢুকে গেছে যে ঢাকায় রান্না করলে সেই রান্নার আর বাড়ির রান্নার মতো মজার হয় না। খুব সকালে মা আসার পর দুপুর থেকে খেয়েই চলেছি। এক দিনে মোটামুটি আমার ওজন ২.৫ কেজি বেড়ে গেছে। কোন আফসোস নাই।
আমরা ৪ ভাইবোন। আমি সবার বড় এবং একমাত্র ছেলে। ভাইবোনেরা মিলে অনেকবার মা’কে বলেছে ঢাকায় এসে থাকতে। কিন্তু আব্বা মারা যাওয়ার পর মা আরো বেশী ব্যস্তা হয়ে পড়েছেন। ঢাকায় আসার বিষয়ে অবশ্য কোন যুক্তিও দিতে পারি না। পৃথিবীর কোন পাগল ৫০ বিঘা আয়তনের বাড়ি ছেড়ে ঢাকার ২০০০ স্কয়ার ফিটের ফ্ল্যাটে এসে থাকবে! তবুও মা আসে। আমি ঘ্যানঘ্যান করি, বোনেরা ঘ্যানঘ্যান করে।
যেহেতু মা এসেছেন ঢাকার নববর্ষ দেখতে তাই বিকেলে বের হয়েছিলাম শাহবাগ এবং চারুকলায় যাওয়ার জন্য। উদ্দেশ্য ছিল নুসরাতের জন্য সবার সাথে দাঁড়াতে। কিন্তু হঠাৎ এলো বৃষ্টি। বৃষ্টির মধ্যেই মা, ইমন ভাই (Imtiaz Mahmood) সহ চারুকলার বকুল তলায় গাড়ি পার্ক করে বসে রইলাম। বৃষ্টি থামে না। মা’র অবশ্য সমস্যা হয় নি। বৃষ্টি পড়লেই তার মন ভালো হয়ে যায়। অনেকক্ষণ থাকার পর আমরা বাতিঘরে গেলাম। অর্ডার করা কিছু বই এসেছে, সেগুলো সংগ্রহ করতে। পুরো সময়টাতে কয়েকটি ছবি তুলেছি। সেগুলো দিয়ে দিলাম। আর আমার বই পাগল মা কিন্তু বই না কিনে থাকেন নি। ওনার পড়াশুনার গভীরতা দেখলে অনেকেই হা হয়ে যাবেন।
আগামী কাল পহেলা বৈশাখ। এই ব্যস্ত নগরের নাগরিক উল্লাস মা’কে কতটুকু খুশি করতে পারবে জানি না। তবুও একটু চেষ্টা করতে ক্ষতি কী! আসছে নতুন বছর, প্রতিটি প্রসূনে, প্রতিটি কিশলয়ে, প্রতিটি সবুজে ভর করে নির্ভার নতুন সময় আসুক। নিজের ক্ষমতার সর্বচ্চটুকু দিয়ে এইবার একটু চেষ্টা করতে চাই। সবাই ভালো থাকুন। শুভ নববর্ষ।
**//** ধানমন্ডি, ঢাকা।