চারদিন ভর্তি ছিলাম স্কয়ার হাসপাতালে। ডেঙ্গু হয়েছিল। এখনও শরীর প্রচণ্ড দূর্বল। গত ১৮ দিন থেকে শুয়ে ছিলাম বিছানায়। শরীর এতই দূর্বল যে ইচ্ছে থাকলেও কিছু লিখতে পারি নি। আজকে বেশ কসরত করে লিখতে বসলাম। এমনিতেই আমি সৌখিন লেখকদের তালিকায়। মানে লিখতে গেলে আকাশে মেঘ থাকতে হয়। আবার যেমন তেমন মেঘ না, একটু নরম তুলোর মতো বা আইসক্রিমের মতো মেঘ হতে হয়। আবার সেই মেঘে নরম আলোও লাগে। এত কিছু মিলে গেলে তখন একটু আধটু লেখা আসে। আর হ্যা সাথে ধুমায়িত চা বা কফি লাগে। মাঝে মাঝে এতসব আয়োজন করতেই সময় চলে যায়। তখন আর লেখার সময় থাকে না। তখন না লিখতে পারার বেদনায় আরো বেশি বেশি খাবার খাই। তবে আজকে লিখব। লিখব পারিবারিক কিছু কথা।
আমার তিন তিনটা ভাগ্নে। আর একজন ভাগ্নে প্রায় আসি আসি করছে। আনুশ বয়সে সবার ছোট। আনুশের বয়স প্রায় পাঁচ। আমার মেঝ বোন রুকসির একমাত্র পুত্র। বর্তমান সময়ের বাচ্চারা যা হয় আরকি। জন্মের পর থেকেই মোবাইল ট্যাব দেখে অভ্যস্ত। আনুশ যখন দুই বছরের একটু বেশী, তখন আবিষ্কার করা হলো যে ইউটিউব দেখে দেখে আনুষ পড়তে শিখে গেছে। ব্যপারটা বড়ই বিস্ময়ের। কেউ কোনদিন তাকে পড়তে শেখায় নি। এখন আনুষ বাংলা এবং ইংরেজি বেশ গড়গড় করেই পড়ে। এই পড়তে গিয়েই সব মজার ঘটনা ঘটে। বাংলা ভাষা যে কত কঠিন তা আনুশকে দেখলে বোঝা যায়। বিশেষ করে বাংলা নাম্বারিং সিস্টেম।
৯৬ মানে যে নয়ষট্টি এটা আনুশের আবিষ্কার। আমিও একমত। ৬৬ যদি ছয়ষট্টি হয় তবে নয়ষট্টি হতে দোষ কোথায়! সরল যুক্তি। এইরকম সংখ্যা নিয়ে আনুশের সমস্যা। সবকিছুই বেশ লজিকের বাইরে। তবে আজকের লেখা আনুষের সংখ্যা পরিচিতি বিষয়ক। বিষয়টা হচ্ছে নাচ।
সকল বাচ্চাদের মতো আনুশ টিভি দেখতে পছন্দ করে। বিশেষ করে ক্রিকেট। এমন কোন ক্রিকেট খেলা নেই, যেটা সে দেখে না। সকল ক্রিকেটার সহ আম্পায়ারদের নামও সে জানে। এবং কে কোন দেশ বা দলের হয়ে খেলে সেটাও তার জানা। ক্রিকেট যখন থাকে না তখন গান চললে সেটা দেখে। এই দেশে বাসায় গান মানেই বলিউডের গান। আনুষের অনেকগুলো বলিউড গান পছন্দ। এবং অনেক গানের সাথে সে কপি করে নাচতেও পছন্দ করে। এইসব নাচের আইডিয়া সে পেয়েছে আমার কনিষ্ঠ বোন নিশির থেকে। নিশি ছোটবেলায় নাচ করত। ভালোই নৃত্যশিল্পী ছিল সে। তার নাচের আস্ত একটা ডিভিডিও আছে। ডিভিডির নাম “নৃত্যের তালে তালে নিশি। বাসায় কোন মেহমান আসলে আমার বাবা বেশ আয়োজন করে সেই ডিভিডি দেখাতেন। বাবাও নেই, নাচও নেই। সবই ইতিহাস। তবে ইতিহাসের ছায়ার মতো নিশি এখন নাচের ধারা চালু রেখেছে পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে। আনুশ তার উদাহরণ।
বলিউডের সুন্দরীদের মধ্যে আলিয়া ভাট আমার প্রিয়। সে আনুশেরও প্রিয়। আলিয়া ভাটের একটা গান আছে টাইগারস্রফের সাথে। আনুষ একদিন সেই গান কপি করে নাচছিল। নিশিও ছিল পাশে। এমন সময় হুট করে আনুষ তার প্যান্ট প্রায় পুরোটা খুলে ফেলল। নিশি জিজ্ঞেস করল “বাবা এটা কেন করছ?” আনুশের উত্তর “আমি মেয়েটাকে কপি করছি”। পরে দেখা গেল সেই গানে বেশ স্বল্পবসনা আলিয়া।
এই বাচ্চাকে কে বোঝাবে সবকিছু কপি করতে হয় না! এ দেখছি তার মামার মতোই গাধা হচ্ছে।
**//** ধানমন্ডি, ঢাকা।