যেখানে স্বপ্নের শুরু…..

by nirjhar

আমার ফটোগ্রাফার হওয়ার পিছনে পানির সম্পর্ক অনেক বেশি কথাটা হাস্যকর কিন্তু অনেক সত্যি। দীর্ঘ বিরতির পর যখন বৃষ্টি আসে তখন থেকেই এই চিন্তার শুরু।

_MG_6863_copy_kanak

গ্রামে বড় হার একটা সুবিধা আছে, নিজের মতোন করে অনেক কিছু দেখা যায় ছোটবেলা থেকেই। হাটিহাটি পাপা করে যখন চলা শুরু হয়, তখন থেকেই বাবা মা এক রকম ছেড়েই দিতেন। কতদূর আর যাব, এই গ্রামের সবাই সবাই কে চেনে। সন্ধ্যা হলে ঠিক কেউ না কেউ বাসায় দিয়ে যাবে! তারপরেও বেশিদূর যাওয়া হত না। শিশুকালে আমাদের বাড়ির পিছনের সুপারি বাগান কে মনে হত বোটানিকাল গার্ডেন। আর তার পিছনের জলা জায়গাকে মনে হত ঘন অরণ্য। একটু দুরে যেখানে ঝাকরা ঝাকরা চুলের সারি সারি গাছেরা বিকেলের আলোতে ঝলমল করত, সেখানে অনেক টিয়া পাখির কলতান ছিল। অনেক বিস্ময় নিয়ে চেয়ে থাকতাম। কারণ অতদূর যেতে পারতাম না। কল্পনায় মনের মধ্যে টিয়া পাখির আসা যাওয়া। স্বপ্নের শুরুটা হয়ত সেখানেই। যে সময়ের কথা বলছি সেটা ১৯৮০ থেকে ১৯৮৫ সালের মধ্যে।

প্রথম বৃষ্টি সব সময় দিনের বেলা হত এমন কথা নেই। যখন রাতের বেলা প্রথম বৃষ্টি হয়, ঘুম ভাঙত ব্যাং এর ডাকে। এত ব্যাং যে অন্য সময় কোথায় থাকত, বুঝতে উঠতে পারতামনা। কারণ ব্যাঙদের হায়বারনাসন এর কথা জানতাম না। ঘুম থেকে উঠেই সময় হয়ে যেত ব্যাংময়। রাজ্যের সব শিশুরা উপস্থিত হয়ে যেতাম সকাল থেকেই। ব্যাং ধরার চেষ্টা করতাম। ঢিল ছুড়তাম। অনেক উত্তেজিত একটা বিষয়। প্রথম বৃষ্টিটা যখন দিনের বেলা আসতো বিস্ময়ের শুরুটা হত বৃষ্টি আসার আগে।

যে প্রান্তরের দিকে চেয়ে চেয়ে সময় পার করতাম তা ছিল ফুলকুমার নদীর একাংশ। বৃষ্টি আসার আগে হুট করে তা বদলে যেত। আকাশ কালো হয়ে আসতো। পুরো অন্ধকার। তার মধ্যে দিগন্ত রেখার একটু উপর দিয়ে অদ্ভুত সুন্দর আলো বের হতো। কালো আকাশের নিচে ফ্লুরোসেন্ট লাইটের মতন এক বিচিত্র আলো। সেই আলো আধারিতে আমার পরিচিত চারপাশ হয়ে যেত স্বপ্নপুরী। মনে হতো এ আমার গ্রাম নয়। এ হচ্ছে রূপকথার মায়াপুরী। অনেক বাতাস হতো সেই মুহুর্তে। ঝড়ো বাতাস। বাতাসে গাছ্গুলন  হেলে পড়ত। একটু পরে শুরু হত বৃষ্টি। প্রত্যেকবারেই বৃষ্টিতে ভিজতাম। কারণ বৃষ্টির সাথে সাথেই অদ্ভুত সুন্দর সেই আলো হারিয়ে যেত আলতো করে। আলোর মিলিয়ে যাওয়া পরিবর্তন দেখতাম। ভালো লাগার শুরু সেখানেই। শিল্পী হওয়ার বাসনাও হয়ত সেখানেই।

মেঘে মেঘে অনেক বেলা হলো। এখনো সেই মেঘের পিছনেই ছুটছি। শেষ শরতের মেঘময় আকাশ এখনো আমাকে দোলা দেয় তেমনি যেমন দিয়েছিল ৩০ বছর আগে। আমার শৈশবের মেঘ এবং প্রথম বৃষ্টির ছবি সবসময় তুলতে চেয়েছি। চেষ্টা করলেও সেই মুহূর্ত আঁকতে পারব না। ক্যামেরাই সম্বল। সেই চেষ্টার মধ্যেই আছি। ক্যামেরা হাতে আমি মেঘের সাথে উড়ি। ক্যামেরা হাতে আমি বৃষ্টির অপেক্ষা করি।

You may also like

1 comment

TANNY May 8, 2012 - 11:53 pm

nirjhar vai onek din por apnar akta lekha sobi soho porlam……shundor

Reply

Leave a Comment

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

-
00:00
00:00
Update Required Flash plugin
-
00:00
00:00